নাটোরের লালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে শীত মৌসুমের উপাদেয় খাবার কুমড়ো বড়ি তৈরীর ধূম পড়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম দুড়দুড়িয়া, মনিহারপুর, পাইকপাড়া, বসন্তপুর, বিলমাড়ীয়া, মাধবপুর, মোহরকয়া, মোমিনপুর, সালামপুর, আড়বার, কচুয়া সহ পার্শবর্তী গ্রামগঞ্জে শীতের তীব্রতার সাথে সাথে কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে।

শীতের হিম শিতল বাতাসে ও প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে সুস্বাদু কুমড়োর বড়ি তৈরীতে ব‍্যস্ত গ্রামের নারীরা।
মাসকলাই ভিজিয়ে রাখার পর সেটি দিয়ে ডালের আটা ও পাকা চাল কুমড়ো মিশিয়ে এ সুস্বাদু বড়ি তৈরি করা হয়।

গ্রামীণ এলাকার ৯০ ভাগ মহিলা পালাক্রমে একে অপরকে সহযোগিতা করে কুমড়ো বড়ি দেওয়ার/তৈরির কাজটি করে থাকেন।
অত্র এলাকার নারীরা এই বড়ি তৈরি করতে কয়েক মাস পূর্ব থেকেই চাহিদা মতো চাল কুমড়ো পাকানোর ব্যবস্থা করে থাকেন।
এরপর মাসকলাই দিয়ে তৈরি করা হয় এই সুস্বাদু খাবারের অংশবিশেষ কুমড়ো বড়ি।

কুমড়ো বড়ি তৈরিতে মূলত চালকুমড়া এবং মাষকলাইয়ের ডাল প্রয়োজন হয় মাষকলাইয়ের ডাল ছাড়াও অন্য ডালেও তৈরি হয় এ বড়ি। রোদে মচমচে করে শুকালেই এর ভালো স্বাদ পাওয়া যায়। বড়ি তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের গন্ডবিল গ্রামের ছকেনা বেওয়া (৭০)জানান,বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়।এরপর চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে দিয়ে বাকি অংশ গুলো মিহিকুচি করে রাখতে হবে। তারপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।ধোয়া হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে।

পরে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় বেটে নিতে হবে। এবার ডালের সঙ্গে কুমড়া মেশাতে হবে। খুব ভালো করে হাত দিয়ে মিশাতে হবে যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়।তারপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হবে।

বড়ি তিন থেকে চার দিন এভাবে রোদে শুকানোর পর খাওয়ার উপযোগি হয়,পরে সেটি অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
এ ছাড়াও পাইকপাড়া গ্রামের সালেহা খাতুন জানান,শীতের সময় মূলত বড়ি তৈরি করা হয়।নিজেরা খাওয়াসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো হয়।

ওই এলাকার জরিনা বেগম বলেন,কুমড়োর বড়ি তৈরিতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। রাত জেগে শীলপাটায় কেজি কেজি ডাল বাটা সহজ কাজ নয়। তবুও কষ্ট করে আমাদের কুমড়ার বড়ি তৈরি করতে হয়।

এছাড়াও অনেকে আছে যারা বাড়িতে বসে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ করে থাকেন।

মাধবপুর এলাকার জামিলা খাতুন জানান,বাজারে প্রতি কেজি মাস কলাইয়ের ডাল ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও চাল-কুমড়ার আকার হিসেবে ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।আমি বাজার থেকে ২ টা বড় সাইজের কুমড়ো ও ২ কেজি মাস কলাইয়ের ডাল ক্রয় করি। প্রথমে মাস কলাইয়ের ডাল রোদে ভালো করে শুকিয়ে তারপর পানিতে ৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিই।কুমড়ো থেকে আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়ার পর এর মধ্যে কিছু মসলা দিয়ে মেশিনের সাহায্যে মিশ্রণ করে কুমড়ো বড়ির জন্য উপকরণ তৈরি করি।আবহাওয়া ভালো হলে কুমড়ো বড়ি গুলো ভালো হয়। বৈরী আবহাওয়া বা শৈত্য প্রবাহের ফলে কুমড়ো বড়ি নষ্ট হয়ে যায়।কুমড়ো বড়ি একটি মুখরোচক খাবার। অনেকের কাছে এটি অনেক প্রিয়। এটির ফলে তরকারির স্বাদে নতুন মাত্রা যোগ হয়।

এ বিষয়ে লালপুর উপজেলার কৃতী সন্তান,বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট গাজীপুর এর প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা(ডাল)জনাব ডঃ ওমর আলী জানান,প্রতি ১০০ গ্রাম মাষকলাইতে আছে ৩৪১ মি.গ্রা. ক্যালরি,৯৮৩ মি.গ্রা. পটাসিয়াম,প্রোটিন ২৫ গ্রাম, সোডিয়াম ৩৮ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম ১৩৮ মি.গ্রা. আয়রন ৭.৫৭ মি.গ্রা।

অপরদিকে,চাল-কুমড়া পুষ্টিকর একটি সবজি।এতে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার রয়েছে তাই চাল কুমড়ার উপকারিতা অনেক।যক্ষ্মা,কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকসহ বহু রোগের উপশম করে চাল কুমড়া।
চাল কুমড়া তরকারি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও মোরব্বা, হালুয়া,পায়েস এবং পাকা কুমড়া এবং কালাই ডাল মিশিয়ে কুমড়ো বড়ি তৈরী করেও খাওয়া হয়।
সব মিলিয়ে কুমড়ো বড়ি নিঃসন্দেহে একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টি কর খাবার বলে মন্তব্য করেন তিনি।